আন্ধারমানিক নদে নৌকার ওপর গণশুনানি
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদে ইলিশের অস্তিত্ব রক্ষা ও উপকূলীয় পরিবেশ সুরক্ষার দাবিতে নৌকার ওপর এক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মধুপাড়া পয়েন্টে আয়োজিত এ গণশুনানিতে স্থানীয় জেলে পরিবার, পরিবেশ কর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
এই গণশুনানির আয়োজন করে প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম-পটুয়াখালী, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রান্তজন, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশবিষয়ক কর্মজোট (ক্লিন) এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অব ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিডব্লিউজিইডি)।
বক্তারা অভিযোগ করেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রা বন্দরকেন্দ্রিক অপরিকল্পিত মেগা প্রকল্পগুলো আন্ধারমানিক নদীর ইকোসিস্টেমে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। নদীতে শিল্পবর্জ্য ও গরম পানি ফেলার কারণে ইলিশের অভয়াশ্রম ধ্বংসের মুখে, আর জীবিকার সংকটে পড়েছেন জেলেরা।
গণশুনানির বিচারক প্যানেলে ছিলেন—বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট খেপুপাড়া নদী উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকূলীয় অধ্যয়ন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক অসীম আবরার, আইনজীবী সুভাস চন্দ্র দাস, ওয়াটার্স কিপার্স বাংলাদেশের কলাপাড়া আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মেজবাহ উদ্দিন, প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক অমল মুখার্জি এবং প্রান্তজনের নির্বাহী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম।
জেলে প্রতিনিধি আবদুর রব, যিনি ৫৫ বছর ধরে মাছ ধরছেন, জানান—রাবনাবাদ চ্যানেলে একসময় হাজারেরও বেশি জেলে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পায়রা বন্দরের জাহাজ চলাচলের কারণে এখন মাছ ধরা বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু তাঁদের কেউ ক্ষতিপূরণ পাননি।
গণশুনানির আয়োজকরা জানান, দেশে ইলিশের উৎপাদন দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ২০২২-২৩ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় উৎপাদন ৪২ হাজার মেট্রিক টন কমে গেছে—যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পতনের মূল কারণ নদীতে কয়লাভিত্তিক শিল্প স্থাপন, বর্জ্য নিঃসরণ ও উষ্ণ পানি প্রবাহ।
মোহাম্মদ আশরাফুল হক বলেন, “আন্ধারমানিক নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দখল ও দূষণ বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি পলি অপসারণের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।”
অসীম আবরার বলেন, “বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য নিঃসরণে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে হবে। ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণে মৎস্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী অবকাঠামোগত পরিকল্পনা প্রণয়ন অপরিহার্য।”
গণশুনানির সার্বিক সিদ্ধান্তে উপকূলীয় পরিবেশ রক্ষা, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ও জেলেদের জীবিকা সুরক্ষায় সরকারের তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।














